বামেরা বাঁকুড়ায় আব্বাসকে আসন ছাড়লে প্রভাব পড়তে পারে তৃণমূল ভোটব্যাঙ্কে

Rangamati Express
0

 দীপেন ঢাং, বাঁকুড়া : এবার বাঁকুড়া জেলায় বিধানসভা নির্বাচন হবে প্রথম ও দ্বিতীয় দফায়। যদিও এখনও কোনো দল প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করেনি। তাই বোঝা যাচ্ছে না বাম কংগ্রেস জোট আইএসএফকে বাঁকুড়ায় কোন আসন ছাড়বে। জেলার রাজনৈতিক মহলের ধারণা সিপিএম আব্বাস সিদ্দিকীকে জেলার সংখ্যালঘু অধ্যুষিত ওন্দা ও ইন্দাস বিধানসভা ছাড়তে পারে। বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু জানিয়ে দিয়েছেন তারা আইএসএফকে রাজ্যের ৩০ আসন ছাড়বেন। তার মধ্যে যদি বাঁকুড়ার ওই ২ টি আসন ছাড়ে বাম জোট তাহলে তৃণমূলের ভোটব্যাংকে থাবা বসাতে পারে আইএসএফ। আসন রফার আগেই আব্বাস সিদ্দিকী ওন্দা বিধানসভার মুসলিম ভোটের ঘাঁটি পুনিশোল গ্রামে ঘুরে গেছেন । জোটের ব্রিগেড জনসভার আগের দিনই তিনি শুনুকপাহাড়িতে একটি জনসভাও করে গেছেন। ওই জনসভায় সংখ্যালঘু ছাড়াও আদিবাসী ও তপশিলি সম্প্রদায়ের বেশ কিছু মানুষ উপস্থিত ছিলেন।


আদিবাসীদের অধিকার আদায়ে আইএসএফ লড়াই করবে বলেও আব্বাস সিদ্দিকী সাংবাদিক সম্মেলন করে জানিয়ে দিয়েছেন। স্বাভাবিক কারণে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ মহল মনে করছেন, আব্বাস সিদ্দিকী জেলার ওই ২ টি আসন বামফ্রন্টের কাছে আদায় করেই ছাড়বেন। যদি ওন্দা আসনটিতে আইএসএফ প্রার্থী দেয় তাহলে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মোট ভোটের একটা বড় অংশ আব্বাস সিদ্দিকীকে সমর্থন করবে। পাশাপাশি তপশিলি জাতি ও উপজাতি ভোটব্যাঙ্কের একটা বড় অংশেরও তিনি সমর্থন পাবেন বলেই রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মত। পঞ্চায়েত ভোটের সময় থেকেই ওন্দা বিধানসভায় তৃণমূল ভোটব্যাংকে ধ্বস নেমেছে। সংখ্যালঘু ভোট ব্যাংকের উপর নির্ভর করে ২০১৬ বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল খুব কম মার্জিনে এই আসনটি জেতে।

পঞ্চায়েত নির্বাচনে এই বিধানসভার কিছু জায়গায় ভোট হয়েছিল। সেখানে তাদের ভরাডুবি হয়েছে। ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে জেলার ১২ টি বিধানসভাতেই তৃণমূলের পরাজয় হয় বেশ ভালো মার্জিনে। আব্বাস সিদ্দিকী যদি ওন্দায় প্রার্থী দেন তাহলে এই আসনে তৃণমূল ভোটব্যাংকেই থাবা বসাবেন। ফলে ভোট কাটাকাটিতে বিজেপির এই আসনে জয় সুনিশ্চিত বলেই মনে করছেন জেলার তথ্যাভিজ্ঞ মহল।

অন্যদিকে ইন্দাসে প্রার্থী দিলে একটা ফ্যাক্টর হবে আইএসএফ। তবে বাকি আসনগুলিতে সংখ্যালঘু ভোটে তেমন প্রভাব পড়বে না বলেই তারা মত প্রকাশ করেছেন। বিষয়টি নিয়ে জেলা তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব একেবারেই ভাবিত নয়। তৃণমূলের এক শীর্ষ নেতার কথায়, লোকসভা ভোট ছিল অন্য রকম পরিস্থিতিতে। সেইসময় বামের ভোট রামে যাওয়ায় ফল বিরূপ হয়েছিল। তৃণমূল মনে করছে, লোকসভায জেলার ২ আসনেই পরাজিত হয়েছে ঠিকই কিন্তু তাদের শতাংশ হারে ভোট কমেনি।

লোকসভা নির্বাচনে ভোট ব্যাংক ধরে রাখার পাশাপাশি করোনা পরিস্থিতিতে বাড়ি বাড়ি তৃণমূল নেতৃত্ব যেভাবে খাদ্য সংকট মোকাবিলায় সামিল হয়েছিলেন তা অন্য কোনো রাজনৈতিক দল করেনি। এছাড়াও তৃণমূলের জনমুখি প্রকল্প গুলির সুবিধা প্রত্যেকটি বাড়িতে পৌঁছে গেছে। জেলার রাস্তাঘাটের উন্নয়ন, পানীয় জলের সমস্যা সমাধান, মাওবাদী আতঙ্ক দূর এবং আত্মসমর্পণকারী মাওবাদীদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা তৃণমূলকে অনেকটাই অক্সিজেন দেবে বলেই তাদের মত।

ইন্দাস বিধানসভার বিধায়ক গুরুপদ মেটের মত একজন সজ্জন ব্যক্তির করণা আক্রান্ত হয়ে অকাল মৃত্যুতে সহানুভূতির হাওয়া অনেকটাই তৃণমূলের পালের লাগবে বলে মনে করছেন প্রশান্ত কিশোরের টিম থেকে দলের ওয়াকিবহাল মহল। তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যাওয়া প্রাক্তন মন্ত্রী শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী, খাতড়া পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি জয়ন্ত মিত্র ও দলের জেলা সাধারণ সম্পাদক গৌতম মিশ্রর মত হেভিওয়েটরা না থাকলেও কোনো ফ্যাক্টর হবে না। বরং ওনারা দল ছেড়ে বিজেপিতে যাওয়ায় তৃণমূলেরই মঙ্গল হবে বলে মনে করছেন দলের জেলা শীর্ষ নেতৃত্ব।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)