পূজোর সম্ভারে আবারো সেজে উঠেছে বালুচরী শাড়ি, নতুন ডিজাইনের নাম ' কারুকলা '

Rangamati Express
0

 

" বালুচরী  নামের মধ্যেই রয়েছে আভিজাত্য ৷ প্রতিটি শাড়ি যেন কথা বলে ৷ প্রতিটি সুতোর টানে যেন নিজস্ব একটা কথন আছে ৷ কোথাও ফুটে উঠেছে টেরাকোটার কারুকাজ ৷ কোথাও মহাভারতের গল্প ৷ কোথাও আবার আদিবাসী নৃত্য "

নিজস্ব প্রতিনিধি , বাঁকুড়া : বাঙালির শাড়ির সম্ভারে বছরের পর বছর ধরে স্বমহিমায় বিরাজমান বালুচরী ৷ নবাবী এই শাড়িগুলি কোনওটি তৈরি করতে সময় লাগে এক মাস ৷ কোনওটি আবার পনেরো দিন । এক একটা শাড়ির দাম 6 হাজার টাকা থেকে শুরু করে দেড় লাখ টাকা ৷ বালুচরীর ইতিহাস বলতে, এটি শুরু হয়েছিল মুর্শিদাবাদের জিয়াগঞ্জ সংলগ্ন বালুচর নামে কোনও এক এলাকায় ৷ অনেক নথি আবার বলছে, জিয়াগঞ্জেরই পূর্বনাম ছিল বালুচর ৷ সেই বালুচর নাম থেকেই এসেছে বালুচরী ৷ শিল্পীদের কাছে বালুচরীর বয়ন এক সাধনার মতো ৷ সেই সময় নবাবরা তাঁদের বেগমদের জন্য শাড়ি বানাতেন বালুচরের শিল্পীদের দিয়ে ৷ বিদেশের বাজারেও কদর বাড়ছে মল্লগড়ের বালুচরীরকালক্রমে গঙ্গাগর্ভে হারিয়ে যায় এই বালুচর প্রদেশ ৷ এরপর কালের নিয়মে হারিয়ে যায় বালুচরী শাড়ি ৷ মাঝে পেরিয়ে যায় অনেকটা সময় ৷ দীর্ঘদিন পর এর কিছু নকশা শুভ ঠাকুরের হাত ধরে বিষ্ণুপুরের বিখ্যাত কারুকার্য শিল্পী অক্ষয়দাস পাঠরাঙার হাতে আসে ৷ তার পর বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরের মল্ল রাজাদের পৃষ্টপোষকতায় বালুচরী শিল্পের নবজাগরণ ঘটে ।


সেই আভিজাত্যকে বজায় রেখে পূজোর সম্ভারে আবারো সেজে উঠেছে বালুচরী । প্রতিবছরের ন্যায় এবছরও অভিনবত্ব ফুটিয়ে তুলেছেন বর্তমান প্রজন্মের বিষ্ণুপুরের বিখ্যাত বালুচরী শিল্পী অমিতাভ পাল । এবারে তার নতুন ডিসাইনের শাড়ির নাম রেখেছেন *কারুকলা* । এই অতিমারী পরিস্থিতিতে মুখ থুবড়ে পড়েছে জেলার হস্ত শিল্প গুলি, সেই শিল্প গুলি সুতোর বয়নে বালুচরীতে স্থান দিয়ে নামকরন এই *কারুকলা* । জেলার ছয়টি হস্ত শিল্প যথা ডোকরা,হ্যান্ডলুম গামছা,লন্ঠন,টেরাকোটা,শাঁখ এবং হাতে গড়া বিষ্ণুপুরের মল্লরাজাদের দশাবতার তাসকে ফুটিয়ে তুলেছেন । গত দেড় দশক ধরে অমিতাভ বাবু বালুচরীর অভিনবত্ব এনে চলেছেন,এবারে তার শিল্প সত্ত্বায় মানবিকতা ভর করেছে । তিনি বলেছেন,"মুখ থুবড়ে পড়া হস্ত শিল্প গুলো যাতে প্রান পায় তারই চেষ্টা তিনি করেছেন"। এই *কারুকলার* বাজার দর ১৮ হাজার টাকা রাখা হয়েছে, ইতিমধ্যেই ১৭টি শাড়ির বরাত তিনি পেয়েছেন ।


ইতিমধ্যেই মল্লগড়ের এই বালুচরী দেশের বিভিন্ন প্রান্ত ছাড়িয়ে বিদেশেও পাড়ি দিয়েছে, চাহিদাও আছে বর্তমান বাজারে । এই নবাবী শাড়ির ব্যাপ্তি যদি যাতে আরো সুদীর্ঘ হয় এই আশায় বুক বাঁধছেন শিল্পীরা ।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)