শব যাত্রীবাহী গাড়ির স্টিয়ারিং এ হাত রেখেছে বড়জোড়ার পূজা

Rangamati Express
0

মলয় সিংহ, বাঁকুড়া: কথায় আছে ,যে রাঁধে সে চুলও বাঁধে, 

হ্যাঁ ঠিক তাই ইচ্ছা শক্তি থাকলে সব প্রতিকূলতাকে জয় করা সম্ভব। এমনই এক উদাহরণ বড়জোড়ার পূজা ।মনে অদম্য ইচ্ছে আর জেদ  শবযাত্রী বাহী গাড়ি চালাবে সে । যেমন ভাবনা তেমন কাজ  । এ ধরনের গাড়ি চালাতে যেখানে যুবসমাজও পিছপা হয়,সেখানে সব ভয় প্রতিকূলতাকে জয় করে স্টিয়ারিং এ হাত রেখেছে পূজা। বড়জোড়ার মেধাবী পূজা মন্ডল বর্তমানে আসানসোল বিবি কলেজের জুলজি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষক শিক্ষণ প্রশিক্ষণও। পড়াশোনার পাশাপাশি অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়ানোর চিন্তা ওর ছোট থেকেই। যে সময়ে সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে ফেসবুক হোয়াটসঅ্যাপ নিয়ে ব্যস্ত যুব সমাজ তখন পূজা এক অনন্য উদাহরণ। শুধুমাত্র শব যাত্রীবাহী গাড়ি চালানো শেখায় নয়, করোনা পরিস্থিতিতে নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পূজা কখনো ঔষধের দোকানে-দোকানে করেছে সেনিটাইজার। কখনো করেছে রক্তদান শিবিরের আয়োজন , কখনো আবার সমাজ সচেতনতার বার্তা নিয়ে এগিয়ে এসেছে চৌরাস্তার মোড়ে। করোনা আবহে সে দেখেছে শববাহী গাড়ীর সংকট। চাইলেই মেলেনি গাড়ি। কোথায় আবার গাড়ি থাকলেও নেই স্থায়ী চালক। তাই এবার চালকের ভূমিকায় নিজেকে আসীন করতে গত সপ্তাহ থেকে ফাঁকা মাঠে শিক্ষক কাঞ্চন বিদের সহযোগিতায় শুরু করেছে শব বাহী গাড়ি চালানো। 

পূজার মা টুম্পা মন্ডল জানান, পুজা যখন ক্লাস নাইনে পড়তো তখন থেকেই মানুষের হয়ে কাজ করার ইচ্ছে ছিল। প্রথম প্রথম মেয়েকে একা ছাড়তে আমরা ভয় পেতাম। আর যাই হোক মেয়ে তো ? তবে এখন আর ভয় হয় না । পূজার এই ধরনের কাজে আমরা খুব খুশি সত্যি বলতে পূজার জন্য আমাদের গর্ব হয়।

পূজা জানান, আমাদের সংগঠন বড়জোড়া ব্লক ব্লাড ডোনার্স এসোসিয়েশন এই গাড়িটি পায় ২০১৪ সালে তারপর থেকে গাড়িটি চালাতেন দু'জন চালক ও স্যার কাঞ্চন বিদ। প্রযোজনে একদিন গাড়িটিকে কলকাতা নিয়ে যাওয়ার জন্য কোন চালক ছিলেন না ,স্যারও ব্যস্ত ছিলেন। সেদিন স্যার ট্যাক্সি স্ট্যান্ডে এগিয়ে চালকদের বললেন কেউ গাড়িটিকে নিয়ে একটু কলকাতা যাবে? সবাই এক বাক্যে উত্তর দিলেন না ! মৃতদেহ নিয়ে যাওয়া গাড়ি আমরা চালাবো না। সেদিন থেকেই আমি গাড়ি চালানোর কথা স্যারকে জানাই । এবং এক সপ্তাহ হল আমি গাড়ি চালানো শিখছি। তবে লাইসেন্স পেলেই মানুষের হয়ে ছুটে যাব।

শিক্ষক কাঞ্চন বিদ জানান যে, আমাদের সংগঠন বড়জোড়া ব্লক ব্লাড ডোনার্স এসোসিয়েশন মূলত রক্তদান আন্দোলন, থ্যালাসেমিয়া প্রতিরোধে সচেতনতা গড়ে তোলা ও অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়ানোর জন্যই গড়ে উঠেছে। আমাদের সংগঠনের প্রতিটি সদস্যই সমান ভাবে সক্রিয় তবে পূজার কথা আলাদা ভাবে বলতেই হয় । কারন একসাথে এতগুলো প্রতিভা  খুব কম মানুষেরই দেখা যায় ।  যেমন: মেধাবী পড়ুয়া,চিত্র শিল্পী, সাহিত্য রচনায় দক্ষ, সংসারের কাজে নৈপুন্যতা, সংগঠনের তহবিল সামলানো এছাড়া পূজা ভালো নৃত্যও করে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)