অরবিন্দ নায়েক , পশ্চিম মেদিনীপুর : পুরো কোর্স সম্পূর্ণ করতে খরচ পড়ত সাড়ে তিন লাখ টাকা। এলাকাবাসীর সহযোগিতায় এক লাখ টাকা জমা দিয়ে ক্লাস শুরু করে তিথি। বাকি টাকার জন্য স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ডে লোনের আবেদন করে। কিন্তু লোন না মেলায়, নার্সিং কোর্সের দ্বিতীয় কিস্তির মোটা টাকা মেটাতে পারেনি তিথি। ফলে পরীক্ষায় বসার সুযোগ হারায়।
শেষ রক্ষা হল না। টানা ১৭ দিন হাসপাতালের আইসিইউতে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ার পর মৃত্যু হল চন্দ্রকোণার ভেরবাজারের নার্সিং পড়ুয়া ছাত্রীর। স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ডে ঋণ না পেয়ে বিষ পান করে আত্মহত্যার চেষ্টা করে তিথি দলুই নামে ওই ছাত্রী। তারপর থেকেই গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিল তিথি। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে চন্দ্রকোনার নার্সিং পড়ুয়া ওই ছাত্রী।
১৪ আগস্ট রাত্রি তিনি বিষ পান করে আত্মহত্যার চেষ্টা করে চন্দ্রকোণা পুরসভার ১২ নম্বর ওয়ার্ডের ভেরবাজার গ্রামের বাসিন্দা জয়দেব দলুইয়ের মেয়ে তিথি দলুই। প্রথমে চন্দ্রকোণা গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে। কিন্তু অবস্থার অবনতি হলে ১৫ অগস্ট রাতে তাকে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। সেখানেই আইসিইউতে চিকিৎসাধীন ছিল তিথি। পরিবারের তরফে অভিযোগ, উচ্চমাধ্যমিকে উত্তীর্ণ হওয়ার পর তিথি বেঙ্গালুরুর একটি নার্সিং ট্রেনিং কলেজে ভর্তি হয়। জানা গিয়েছে, বেঙ্গালুরুর যে নার্সিং কলেজে তিথি ভর্তি হয়েছিল, সেই কলেজের কর্তৃপক্ষের তরফে জানানো হয় যে পুরো কোর্স সম্পূর্ণ করতে খরচ পড়বে সাড়ে তিন লাখ টাকা। ভর্তির সময় এলাকাবাসীর সহযোগিতায় এককালীন এক লাখ টাকা জমা দিয়ে কলেজে ক্লাস শুরু করে তিথি।
পরিবারের আর্থিক সংগতি না থাকায়, এরপরই বাকি টাকা মেটানোর জন্য স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ডে লোনের আবেদন করে তিথিরা। তাঁরা ভেবেছিলেন যে, এই স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে ব্যাংক থেকে লোন পেয়ে যাবেন। কিন্তু সমস্ত প্রয়োজনীয় সমস্ত নথি জমা দিলেও লোন মেলেনি। একাধিকবার ব্যাঙ্কে ঘুরেও কোনও সুরাহা হয়নি বলে অভিযোগ পরিবারের। লোন না মেলায়, নার্সিং কোর্সের দ্বিতীয় কিস্তির মোটা টাকা মেটাতে পারেনি তিথি। টাকা দিতে না পারায় পরীক্ষায় বসার সুযোগ হারায় সে। বাধ্য হয়ে বাড়ি ফিরে আসে তিথি। লোন না পেয়ে মানসিক অবসাদে চলে যায় তিথি। মাঝপথে পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যাওয়ার অবসাদ থেকেই বিষ পান করে আত্মহত্যার চেষ্টা করে তিথি দলুই। টানা ১৭ দিন চিকিৎসা চলার পর শেষমেশ মৃত্যু হয় ওই ছাত্রীর। এই ঘটনায় শোকস্তব্ধ ওই ছাত্রীর পরিবার। এলাকায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া।